Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

শিরোনাম
সফল ফ্রিল্যান্সার আফরোজা
ছবি
ডাউনলোড

মুহাম্মদ শফিকুর রহমান (যুগান্তর)

 ৩০ মে ২০২২, ১২:০০ এএম  |  প্রিন্ট সংস্করণ


গরিব-দুঃখীদের কষ্ট তাকে ছুঁয়ে যায়। তিনি দরিদ্র নারীদের সেলাই, রান্নার কাজ শিখিয়েছেন। যেন তারা এসব কাজ করে স্বাবলম্বী হতে পারেন। এতিম, প্রতিবন্ধী, দরিদ্র শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার খরচ জুগিয়েছেন। যাতে তারা লেখাপড়া শিখে মানুষ হতে পারে। এভাবে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েই তিনি আনন্দ খুঁজে পান।

নানা রকম চ্যালেঞ্জ নিয়েই এগিয়ে যান আফরোজা বেগম। দশ বছর আগে স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। দশ বছর স্কুলটি চালিয়ে এক পর্যায়ে ছেড়ে দিতে হয় তাকে। লকডাউনের সময় চোখে মুখে অন্ধকার দেখেন তিনি। স্কুল ভাড়া, শিক্ষকদের বেতন। মোটের উপর সাত লাখ টাকা দেনা। পছন্দের মানুষকে বিয়ে করায় ভাইদের কাছেও সাহায্য চাইতে তার মন সায় দেয়নি। তিনি নতুনভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন।

এ প্রসঙ্গে আফরোজা বলেন, ফ্রিল্যান্সারের কাজ যখন শুরু করি এ পেশাকে কেউ ভালো চোখে দেখতেন না। অনেক কটু কথা শুনতে হয়েছে আমাকে। সংসারের কাজের ফাঁকে রাত-দিন পরিশ্রম করেছি। আমি অনেক কিছু বুঝতাম না। পারতাম না। তবে মনোবল ছিল আমাকে পারতেই হবে। আমি পেরেছিও। ২০১৭ সালে নারায়ণগঞ্জের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের হাত থেকে ল্যাপটপ পুরস্কার পাই। ল্যাপটপে তিন রঙের করপোরেট ইনভয়েস ডিজাইন করি। যেটা কোডগ্রাফ দ্বারা স্বীকৃতি পায়। নারী ফ্রিল্যান্সাররা কাজ করবেন। কাজ শিখবেন। এমন একটা স্বপ্নের কথা বলেছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক। তিনি জায়গার ব্যবস্থাও করে দিয়েছিলেন। কিন্তু নানা বাধা বিপত্তি আসায় সে পথে আর এগোনো হয়নি। নারী উদ্যোক্তাদের পরিবারের সমর্থন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।

আফরোজা বেগম স্বামী, সন্তান নিয়ে নারায়ণগঞ্জের ইসদাইর এলাকায় থাকেন। তিনি ১৯৯৫ সালে নারায়ণগঞ্জ মহিলা কলেজ থেকে ডিগ্রি পাশ করেন। ১৯৯৭ সালে তার বিয়ে হয়। বিয়ের পর লেখাপড়া সহজ ছিল না। নানা রকম বাধা ছিল। তবুও তিনি সিদ্ধান্ত নেন মাস্টার্স করবেন। ২০১২ সালে তিনি নারায়ণগঞ্জ সরকারি তোলারাম কলেজ থেকে দর্শন বিভাগে এমএ পাশ করেন। ২০১৪ সালে ক্রিয়েটিভ আইটি প্রতিষ্ঠান থেকে গ্রাফিক্স ডিজাইন কোর্স করেন। এ কোর্স তার চোখ খুলে দেয়। তিনি প্রমাণ করেন ফ্রিল্যান্সিংয়ে বয়স কোনো বাধা নয়।

লাইভে এক ফ্রিল্যান্সারকে আফরোজা বলেছিলেন, তার বয়স চল্লিশ। এ বয়সে ফ্রিল্যান্সিং পারবেন কিনা? নিজের প্রতি কিছুটা সন্দেহ ছিল। এর উত্তরে তিনি বলেছিলেন, ‘তার বয়স আটচল্লিশ। এ বয়সেও প্রচুর কাজ করছেন তিনি। বয়স যেন হার মেনেছে তার কাছে।’ তাতে সাহস হয়। বুঝতে পারি বয়স আসলে কোনো বাধা নয়। ডিজিটাল মার্কেটিং, আর্টিকেল রাইটিং, ওয়েব ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, গ্রাফিক্স ডিজাইন, এন্ড্রয়েড এপ্স ডেভেলপমেন্ট, ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট, ডাটা সায়েন্স অ্যান্ড এনালাইটিক্স, এফিলিয়েট মার্কেটিং ইত্যাদি যে কোনোটি বেছে নেওয়া যায়। ফ্রিল্যান্সিংয়ে কাজের পরিধি ব্যাপক।

আফরোজা ফ্রিল্যান্সিংয়ে এসেছেন ঘরে বসেই কাজ করার জন্য। তার মতে, ঘরে বসে মেয়েদের জন্য এর চেয়ে ভালো কাজ আর হতেই পারে না। পরিবারকে সময় দেওয়া যায়। পছন্দের কাজ বেছে নেওয়া যায়। আবার পরিবেশ শতভাগ নিরাপদ। বাইরে যাওয়ার ঝক্কি ঝামেলা নেই। তবে ভালো প্রতিষ্ঠান থেকে ফ্রিল্যান্সিং শিখতে হবে। ভালো কাজ না জানলে কাজ পাওয়া যাবে না। ধৈর্য থাকতে হবে। আর অবশ্যই ভালো গতির ইন্টারনেট সংযোগ থাকা চাই। ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন, ধীরগতির হলে কাজ হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে।

আফরোজা ফাইভারে কাজ করছেন। ফাইভার, আপ ওয়ার্ক ফ্রিল্যান্সার ডট কম, 99design.com এগুলো বেশি জনপ্রিয়। সারা বিশ্বে নারী ফ্রিল্যান্সারদের সংখ্যা বাড়ছে দিনদিন। বিশ্বে অনলাইন ফ্রিল্যান্সারের মধ্যে ৫৮ ভাগ নারী। বাংলাদেশে ২০১৪ সালে মাত্র ৯ শতাংশ নারী এ কাজ করতেন। ২০২১ তা দাঁড়িয়েছে ১৪ শতাংশে। দেশে ফ্রিল্যান্সারদের উৎসাহ বাড়াতে আয়ের ওপর ৪ শতাংশ প্রণোদনা দেবে সরকার। ২০২১-২২ অর্থবছর থেকে এ প্রণোদনা কার্যকর হবে।

আফরোজা কাজ শিখেছেন লার্নিং আরনিং ডেভেলপমেন্ট এবং ক্রিয়েটিভ আইটি নামে দুটি প্রতিষ্ঠান থেকে। এখন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের শিখাচ্ছেন। তিনি বলেন, আমি আন্তরিকভাবে ছাত্রছাত্রীদের শেখানোর চেষ্টা করি। আমার কাছে নিজের লাভ অলাভ পরে। আগে ওদের শেখানোটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ক্যারিয়ার আইটি বাংলাদেশ নামে, একটি পেজ আছে। গ্রুপও রয়েছে কয়েকটা। ষবফঢ় গ্রুপ এ এডমিন তিনি। যখন যতটুকু সম্ভব তিনি অন্যদের সহযোগিতা করেন। যেটা নতুন ফ্রিল্যান্সারদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেসঙ্গে ফ্রিল্যান্সিং কাজে ইংরেজিতে একটু দক্ষতা থাকতে হবে।